“প্রতিটি মানুষই উদ্যোক্তা হয়ে জন্ম নেয় - চাকরি হলো তাকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়া:” আসামের স্বায়ত্বশাসিত বোডোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত “নলেজ ফেস্টিভালে” প্রফেসর ইউনূস
ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ (মার্চ ০২, ২০২৩ )
নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ২৭ ফেব্রুয়ারী—২ মার্চ, ২০২৩ আসামের স্বায়ত্বশাসিত বোডোল্যান্ড অঞ্চলের প্রশাসনিক সদর দপ্তর কোকরাঝারে অনুষ্ঠিত বোডোল্যান্ড নলেজ ফেস্টিভালে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী প্রমোদ বোরো প্রফেসর ইউনূসকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান।
২৭ ফেব্রুয়ারী নলেজ ফেস্টিভালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত তাঁর ভাষণে প্রফেসর ইউনূস বলেন যে, নারীদের উদ্যোক্তায় পরিণত করে তাদের ক্ষমতায়ন সমাজের সার্বিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং প্রতিটি সরকারেরই লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষকে উদ্যোক্তায় পরিণত করা, চাকুরেতে নয়। তিনি বলেন, দরিদ্র নারীদের উদ্যোক্তায় রূপান্তরিত করতে গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগ বাংলাদেশের আর্থ—সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। তিনি আরো বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংকের এক কোটি দরিদ্র নারী ঋণগ্রহীতা যদি উদ্যোক্তা হতে পারেন, তাহলে যে—কোন মানুষেরই উদ্যোক্তা হতে পারার কথা। কিন্তু আমরা মানুষকে উদ্যোক্তা হবার সুযোগ দিই না; আমরা বরং তাদেরকে চাকরি খেঁাজার পথে ঠেলে দিই।”
নলেজ ফেস্টিভাল উদ্বোধন করেন স্বায়ত্বশাসিত বোডোল্যান্ড অঞ্চলের প্রথম প্রধান নির্বাহী প্রমোদ বোরো। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আসাম রাজ্য পরিষদের স্পীকার বিশ্বজিৎ দাইমারী, প্রতিমন্ত্রী ইউজি ব্রম্ম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। আসামের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এই ফেস্টিভালে অংশ নেন।
ফেস্টিভালে বিশেষভাবে জোর দেয়া হয় বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অঞ্চলে ও সার্বিকভাবে জাতি সংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ বাস্তবায়নের উপর। এই লক্ষ্যে আলোচ্য বিষয়সমূহের অন্তর্ভূক্ত ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্থানীয় জ্ঞান ও দক্ষতা ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার ও সুরক্ষা, শান্তি ও সুশাসন, এবং বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের ভূমিকা। ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ৩ শতাধিক এবং পৃথিবীর ১৪টি দেশ থেকে আগত আরো ৩৫ জন প্রতিনিধি ফেস্টিভালে অংশ নেন। ফেস্টিভালে বক্তব্য রাখা ছাড়াও প্রফেসর ইউনূস বোডোল্যান্ড কলেজ ও বোডোল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত পৃথক পৃথক সমাবেশে ভাষণ দেন। এছাড়াও তিনি রাঙ্গিয়া কলেজ ও গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। বোডোল্যান্ড নলেজ ফেস্টিভালে মূল অনুষ্ঠানের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত আসামের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সাথে তিনি শিক্ষা বিষয়ক একটি বিশেষ মতবিনিময় সভায়ও অংশ নেন।
উল্লেখ্য যে, বোডো জনগোষ্ঠীর জন্য একটি পৃথক বোডো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবীতে আসামের বোডোদের প্রায় ৩০ বছরের গুপ্ত ও সশস্ত্র সংগ্রামের পর ২০২০ সালে একটি শান্তি চুক্তির অধীনে বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিওন সৃষ্টি হয়। এই আন্দোলনে অনেকে জীবন বিসর্জন দেন। এই শান্তি চুক্তির অধীনে প্রমোদ বোরোর নেতৃত্বে স্বায়ত্বশাসিত বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিওন সৃষ্টি করা হয় যাঁর প্রধান নির্বাহী হিসেবে বোডো জনগোষ্ঠীর স্বায়ত্বশাসন নিশ্চিত করা তাঁর দায়িত্ব। বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল আয়োজিত এই “নলেজ ফেস্টিভাল” বৃহত্তর বিশ্বের সাথে যুক্ত হতে ও বোডো জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও দিক—নির্দেশনা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক সমাবেশ।
তাঁর ৩ দিনের সফরকালে প্রফেসর ইউনূস পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বোডোল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে অবস্থান করেন।
সমাপ্ত